আদা সকল রোগের দাদা
আদা--একটি মূলি উদ্ভিদ,এছাড়াও আমরা মসলা হিসেবে প্রতিদিন ব্যবহার করে থাকি। মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে এটি অন্যতম। আদা খাদ্য শিল্পে ও পানিও তৈরিতে, আছার ও সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।আদার ভিতোর মূলত হলুদ রং এর হয়ে থাকে ।আদা গাছের উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাতাগুলো দুই দিকে সুন্দরভাবে সাজানো থাকে।
100 গ্রাম আদায় আছে ৮০ক্যালোরি শক্তি, ১৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.৭৫ গ্রাম ফ্যাট, ৪১৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৩৪মিলিগ্রাম ফসফরাস।
আদার পুষ্টিগুণ:
১২.৩ %শ্বেতসার,২.৩%প্রোটিন,আঁশ২.৪%,খনিজ১.২%,পানি ৮০%৮% বিদ্যমান।
আদার উপকারিতা :
আদা মূলত পেটের পীড়া, ফুসফুসের রোগ,জ্বর, সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লাগা, খাওয়ায় অনিচ্ছা এই সবকিছু থেকে এক টুকরো কাচা আদায় মুক্তি দিতে পারে। এছাড়াও প্রতিদিন এক টুকরো আদা মাইগ্রেনের ব্যাথা, ডায়াবেটিসে ,কিডনি-জটিলতা, রক্তের অনুচক্রিকা, কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
এবার জেনে নেওয়া য়াক আদা কোন কোন সমস্যার নিবিড় ভাবে কাজ করে :
আমাশায় পেটেরব্যথা আদার উপকারীতা:
যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন 1 চা-চামচ আদার রস এর সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে এক কাপ গরম পানিতে নিয়মিত মিশিয়ে চায়ের মত করে খেলে এর সুফল পাবেন।
জ্বর, বমি বমি ভাব, কাশি, ও কফ দূরে আদার উপকারীতা :
যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন ৪থেকে ৫ বার এক চা-চামচ করে আদার রস এর সাথে এক চিমটি লবন মিশিয়ে এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে এর সুফল পাবেন।
গলা ব্যথা ও মাইগ্রেন সমস্যা আদার উপকারিতা :
এই সমস্যাগুলো তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য সামান্য লবন এর সঙ্গে কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে হবে। এ রোগ সরাতে হলে প্রতিদিন দুই থেকে তিন বেলা লেবুর রস এর সাথে মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চা এর মত করে খেতে হবে।
পাকস্থলী ও লিভারের সংক্রমণ দূরে আদার উপকারীতা:
১ চা চামচ আদা গুড়ার সাথে ১ চামুচ মধু এর সাথে ভিনেগার বা আমলকীর গুড়া নিয়মিত ২/৩ বেলা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে পাকস্থলীর শক্তি বৃদ্ধি পায়।
হাপানি ও ফুসফুসের সংক্রমণে আদার গুনা গুন :
ফুসফুসের ধমনীতে কোনো সংক্রমণ ও শ্বাস নিতে সমস্যা হলে দিনে দুই/তিন বেলা গরম পানিতে আদার রস নিওমিত মিশিয়ে খেলে এর সমাধান পাওয়া যায়। এর আর একটি বিশেষ দিক লক্ষ রাখতে হবে ঠান্ডা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
ক্যান্সার রোধ :
মধুর সঙ্গে আদা মিশিয়ে খেলে তা ক্যান্সার রোধ করতে পারে। কারণ এই দুই উপাদানের মধ্যেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয় এবং ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্তণে এর সহায়ক:
প্রতিদিন দুবেলা ১ চা চামুচ আদার রসের সাথে লেবু গরম পানিতে মিশিয়ে চা এর মত করে খেলে সমাধান পাওয়া যায়।
এছাড়াও আদা------
- অতিসারে- পাতলা এবং ঘনঘন পায়খানা হচ্ছে? প্রথমে আমলকি বেটে নাড়ির চারদিকে পুরু করে প্রলেপ দিতে হবে, এরপর আদার রসে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে আমলকির প্রলেপের ওপর চাপা দেওয়া দরকার। আদার রসে ভেজানো কাপড় শুকিয়ে গেলে পুনরায় আদার রসে ভিজিয়ে নিতে হবে। দ্রুত ফললাভের জন্য এক চামচ পরিমাণ আদার রস অল্প ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। অতিসার রোগের এ চিকিৎসা অনেক দিনের পুরনো
- পুরানো আমাশয়- বহুদিনের আমাশয়ে যারা ভুগছেন, কিছুতেই সারছে না, এক্ষেত্রে আদাকে শুকিয়ে গুঁড়ো করে, এক গ্রাম পরিমাণ গুঁড়ো হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। তবে নিয়মিত খাওয়া দরকার। এতে আম পরিপাক হবে এবং আমাশয় কমে যাবে।
- পেটে বায়ু জমলে অনেক সময় সে বায়ু ওপরদিকে উঠে আসে ফলে বুকে যন্ত্রণা বা অবিরাম হিক্কা হতে থাকে। আধা কাপ পারিমাণ ছাগলের দুধের সঙ্গে আধা চামচ আদার রস মিশিয়ে খেলে হিক্কা কমে যাবে।
- রক্তপাত বন্ধ করতে হবে- শরীরের কোথাও অনেকটা কেটে গেলে কিংবা রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না, এ সময় খানিকটা শুকানো আদার গুড়ো নিয়ে কাটা স্থানে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হবে এবং কাটা স্থানটি তাড়াতাড়ি জোড়া লাগতে সাহার্য করবে।
- আমবাত - শরীরে চাকা চাকা দাগ হয় এবং লাল হয়ে ফুলে ওঠে, এক বছর বা আগে তৈরি দুচামচ পরিমণ আখের গুড়ের সঙ্গে এক চামচ আদার রস মিশিয়ে খেলে আমবাত কমে যাবে। তবে ওষুধ খেয়েও পায়খানা পরিস্কার না হলে আমবাত কমবে না। কাজেই একে নির্মূল করতে পেট পরিস্কার করার ওষুধ খাওয়া দরকার।
- বসন্ত রোগে- বসন্তের গুটি বের হচ্ছে না, গুটি তাড়াতাড়ি বের হওয়া দরকার, এ অবস্থায় আদা খুবই ফলদায়ক। এক চামচ কাঁচা আদার রসের সঙ্গে সমপরিমাণ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে গুটি তারাতারি বেরিয়ে যাবে।
- ক্ষিদে বাড়াতে- কিছুই খেতে ইচ্ছে হয় না, অর্থাৎ ক্ষুধা মন্দা এবং খুখে অরুচি, দুপুরে খাবার আগে সৈন্ধব লবন দিয়ে একটু আদা খেতে হবে। এতে ক্ষিধে বাড়বে এবং মুখের রুচিও ফিরে আসবে।
- পাকস্থলী ও হজমশক্তি বৃদ্ধিতে- দুই থেকে তিন গ্রাম পরিমাণ কাঁচা আদার সঙ্গে সামান্য পরিমাণ বিট লবন মিশিয়ে আহারের পর দিনে দুবার সেব্য। ১৫-২০ দিন নিয়মিত সেবন করে যাওয়া আবশ্যক।
- কাশি ও স্বর পরিস্কারে- আদার রস এক চা চামচ, তুলসি পাতার রস এক চামচ, মধু দুই চামচ একত্রে মিশিয়ে প্রত্যহ দুই থেকে তিন বার সেব্য। সাত থেকে ১০ দিন সেবন করে যাওয়া আবশ্যক।
- কর্ণবেদনায় আদার রস তিন থেকে চার ফোঁটা ঈষৎ গরম করে প্রত্যহ দুই থেকে তিন বার কর্ণে প্রয়োগ করলে বিশেষ উপকার হবে। দুই থেকে চার দিন নিয়মিত কর্ণে প্রয়োগ করে যেতে হবে।
আদা প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা একটি অপরিহার্য উপাদান। আমরা এটিকে ময়্সলা হিসেবে রান্নায় প্রিতিদিন ব্যাবহার করি এর পাশা পাশি আরও সুবিধা পেতে নিওমিত আদা রস এর বিকল্প নেই। আমাদের ১৫ গ্রাম আদার রস সারা দিতে খাওয়া উচিত |