লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা-২০২২

 


ভিটামিন সি খ্যাত লেবু মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি পরিচিত এবং জনপ্রিয় খাদ্যের নাম।কাঠফাটা রোদের তপ্ত গরমে এক গ্লাস লেবুর শরবত কিংবা খাওয়ার প্লেটে সালাতের সাথে লেবু এসব যেন চিরাচরিত সত্য ঘটনা।নানান প্রয়োজনে ব্যবহৃত এ উপাদানে অর্থ্যাৎ লেবুর ব্যবহার, উপকারিতা ও অপকারিতা ও অনেক
লেবুর ব্যবহার, উপকারিতা ও অপকারিতা- ২০২২ সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই আমাদের ধারনা নিতে হবে লেবুর পরিচিত সম্পর্কে।

লেবুর পরিচিতি: লেবু প্লানটি জগৎের ,সেপিনডেলাস বর্গের,রুটাসিয়া পরিবারের, সাইট্রাস গণের, সি.লিমন প্রজাতির উদ্ভিদ।লেবুর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছর সাইট্রাস লিমন।এছাড়াও এর অনেক প্রতিশব্দ রয়েছে।লেবু একটি চিরসবুজ জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রতাজি।লেবুর জন্মস্থান নিয়ে অনেক মতামত রয়েছে।কারো মতে লেবু ভারতের আসামে,কারো মতে উত্তর বার্মায় আবার কারো মতে লেবু চীনে জন্মেছে বলে শুনা যায়।

লেবুর পুষ্টিগুন: লেবু কাঁচা, খোসা ছাড়া যেকোনভাবে খাওয়া যায়।এর উপর ভিত্তি করে প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুতে থায়ামিস,রিবোফ্লাভিন, নায়াসিন,প্যানটোথিন,এসিড,ভিটামিন,ফোনেট, কোলিন,ভিটামিন সি,খনিজ,লৌহ,ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম,পটাস,ম্যাঙ্গানিস সহ বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়।

লেবুর উপকারিতা সমূহ-২০২২

ঠান্ডা প্রতিরোধ:

শরিরের ঠান্ডা প্রতিরোধে লেবু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এন্টিসেপটিক হিসবে কাজ করে শরীর কে ঠান্ডার রোগ থেকে প্রতিরোধ করে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

ভয়ানক ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবু বেশ কার্যকর। বহুদিন আগে থেকেই লেবুর এ গুন সম্পর্কে ডাক্তাররা বলে আসছেন।ক্যান্সার রোগির শরীরে সৃষ্ট ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে লেবু বেশ বড় ভূমিকা পালন করে।লেবুতে বিদ্যমান লিমোনয়েড ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে এই নিরব ভুমিকা পালন করে থাকে।অনেকেই বলে থাকে ক্যান্সারের জন্য ব্যবহৃত কেমোথেরাপির থেকে লেবু বেশ কার্যকরী।

আলসার সারাতে লেবু

মানব শরীরের একটি ভয়ংকর এবং জ্বালাময়ী রোগের নাম হচ্ছে আলসার।এটি থেকে রক্ষা পেতে লেবুর রস ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে যা অনেকাংশেই কার্যকরী। এছাড়া বুকে অত্যাধিক জ্বালাপোড়া লক্ষ করলে লেবুর রস খেলে তা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লেবু

শরীরে পর্যাপ্ত পর্যায়ে পটাসিয়াম না থাকলে অনেক সময় উচ্চ রক্ত চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে।উচ্চ রক্ত চাপ থেকে হার্টের প্রবলেম তৈরি হয়।পরবর্তীতে এ থেকে মৃত্যু বা বড় ধরেনর বিপদ ও চলে আসতে পারে।কিন্তু এ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য আমরা নিয়মিত লেবু খেতে পারি।কেননা লেবুতে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম রয়েছে।তাই যারা নিয়মিত লেবু খায় তারা পটাসিয়ামের অভাব থেকে অনেকটাই মুক্ত।তাই যেসব মানুষ উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যায় ভুগতেছেন তাদের উচিৎ নিয়মিত লেবুর রস পান করা।

কাটাস্থান,ক্ষত শুকাতে লেবু

কাটা কিংবা ক্ষত দ্রুত শুকাতে লেবুর ব্যবহার অনেক। লেবুতে থাকা এসকরবিক এসিড ক্ষত স্থান শুকানে দ্রুত কাজ করে থাকে। তাই কোন স্থান কেটে গেলে কিংবা ক্ষত হলে আমরা বেশি বেশি করে লেবুর রস পানের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হতে পারি।

ক্লান্তি দূর করতে লেবু

ক্লান্তি দূর করতে লেবুর ভূমিকা কতটুকু তা হয়তো সকলেরই জানা।রোদ কিংবা গরমের দিনে আমাদের দেশে রাস্তায় রাস্তায় কিংবা দোকানে দোকানে লেবুর শরবত বিক্রি করতে দেখা যায়।লেবুর শরবত ক্লান্তি দূরীকরনে জাদুকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।এছাড়াও অনেকে লেবুর চা ও পছন্দ করে।অতিরিক্ত ওজন কমাতে লেবু:যাদের শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় ওজন রয়েছে তাদের যন্ত্রণা শুধু তারা বুঝে থাকে।কিন্তু এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে লেবু ভূমিকা বেশ প্রসংশনীয়।লেবু আমাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমাতে বাধা সৃষ্টি করি।ফলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়।

লেবুর খোসার উপকারিতা -২০২২

লেবুর পাশাপাশি লেবুর খোসাও আমাদের বিভিন্ন উপকারে ব্যবহৃত হতে থাকে,তাই লেবুর খোসা না ফেলে দিয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারি।লেবুর খোসা রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।লেবুর খোসাতে বিদ্যমান রয়েছে উপকারী পেকটিন,ভিটামিন সি,ফাইবার ও খনিজ পদার্থ। এ সব উপকারী উপাদান বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে আমাদের রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।উচ্চ রক্ত চাপ,কোলেস্টেরল, ডায়েবিটিস, হাড় কে শক্ত রাখা সহ বিভিন্ন উপকারে লেবুর খোসা বেশ কার্যকরী। এছাড়াও লেবুর খোসা শরীর ওজন নিয়ন্ত্রণের কাজেও ব্যবহার উপযোগী।

মুখের দুর্গন্ধ ও দাতের যত্নে লেবু

মুখের দুর্গন্ধ মানুষের জন্য একটি অস্বস্তিকর লজ্জাজনক সমস্যা।কেউ চায় না তার কথা বলার সময় মুখ থেকে বিশ্রী দুর্গন্ধ বের হোক।এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অনেকে অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকে।যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তারা লেবুর সাহায্যে সহজেই মুখের দুর্গন্ধ কমাতে পারবেন।এ জন্য আপনারা এক গ্লাস পানিতে তে কিছু পরিমান লেবুর রস যুক্ত করে নিয়ে পুরো পানিটুকু পান করুন।এছাড়াও লেবু রস আপনার দাতের দাগ সরাতে সহায়তা করবে।

রূপচর্চায় লেবুর ব্যহার-২০২২

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু শুধু খাওয়া ও রোগ নিরাময়েই সীমাবদ্ধ নয়।আমাদের দেশ সহ বিশ্বের সকল দেশের নারীরা লেবু কে তাদের রূপ,ত্বক চর্চার উপাদান হিসবে ব্যবহার করে থাকে।লেবুর মধ্যে এমন কিছু কার্যকরী উপাদান রয়েছে যা ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।ত্বক কোমল রাখতে লেবুর রস ব্যবহার করা হয়।এছাড়া ও ত্বক শুষ্ক কিংবা খসখসে হয়ে গেলে লেবুর রস ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের খসখসে ভাব দূরীকরণে কাজ করে থাকে।

প্রাত্যহিক জীবনে লেবুর ব্যবহার-২০২২

(১) ব্রণ বিদায়ে।

(২) যৌবনের ধরে রাখতে।

(৩) অপূর্ণতা দূর করুনে।

(৪) কনুইয়ের কালো দাগ মুছতে।

(৫) ত্বক উজ্জ্বল করতে।

(৬) অবাঞ্ছিত লোম দূর করনে।

(৭) চুলের বৃদ্ধিতে, দাঁত সাদা করতে।

(৮) অ্যাভোকাডো এবং আপেল সংরক্ষণ করনে।

(৯) হ্যাংওভার থেকে মুক্তি পেতে।

(১০) মনযোগ বৃদ্ধিতে,চাপ কমাতে

(১১) পেটের সমস্যা দূর করতে।

(১২) রক্তচাপ কমাতে।

(১৩) গলা ব্যথা প্রশমিত করতে।

(১৪) আপনার ক্ষুধা দমন করতে।


লেবুর অপকারিতা -২০২২

অনেক গুণেগুনান্বিত থাকলেও লেবুতে রয়েছে বেশি কয়েকটি অপকারী দিক।বড় ধরনের কোন ক্ষতি না হলেও এসব অপকারী দিকগুলো থেকে আমাদের সাবধান থাকার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।আসুন আমরা জেনে নেই লেবুর অপকারী দিকসমূহ।

যারা দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাস্ট্রিক এ ভুগছেন তাদের জন্য লেবু কম করে খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। লেবুতে থাকা অ্যাসিটিক এসিড এসব রোগীদেন বুকের জ্বালা পোড়া বাড়িয়ে দেয়।এছাড়াও যারা বহুমুত্রের চিকিৎসা হিসেবে কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস খেয়ে থাকেন তাদের একটু সচেতন থাকা প্রয়োজন।কেননা অনেক সময় এ পানি ঘনঘন প্রস্বাবের সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে।নিয়মিত লেবুর রস পান করলর দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হয়,দাঁতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।তাই যারা বিভিন্ন কারনে নিয়মিত লেবুর রস পান করে থাকেন তাদের উচিৎ প্রতিবার লেবুর রস পান করার পর দাঁত ব্রাশ করা এবং ফ্লাসিং পদ্ধতি অবলম্বন করা।লেবুতে থাকা এসিটিক এসিড মুখের নরম কোষ ক্ষতিগ্রস্থ করে থাকে

Post a Comment

Previous Post Next Post